শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

নতুন বেতন কাঠামো এপ্রিলের মধ্যেই বাস্তবায়নে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক

নতুন বেতন কাঠামো এপ্রিলের মধ্যেই বাস্তবায়নে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক

স্বদেশ ডেস্ক:

ব্যাংক খাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম বেতন কাঠামো এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু ব্যাংক নতুন কাঠামোয় বেতন বাস্তবায়নের ঘোষণাও দিয়েছে। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক থেকে এখনো বাস্তবায়নের ঘোষণা আসেনি। ফলে এখন পর্যন্ত ঠিক কতগুলো ব্যাংক নতুন কাঠামোয় বেতন কার্যকর করেছে, সে বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। অন্যদিকে নতুন কাঠামোয় বেতন কার্যকরের সময়সীমাও শেষ হয়ে আসছে। এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলোর বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে সম্প্রতি বেসরকারি ও বিদেশি খাতে ৫২টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে (১২ এপ্রিল) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অগ্রগতি জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে, নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ফরহাদ বিন হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তবে ওই রিটের ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। ফলে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে আইনগত কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমবারের মতো ব্যাংককর্মীদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে গত ২৫ জানুয়ারি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন-ভাতা হবে ২৮ হাজার টাকা। শিক্ষানবিশকাল শেষ হলে প্রারম্ভিক মূল বেতনসহ ন্যূনতম মোট বেতন-ভাতা হবে ৩৯ হাজার টাকা। আর কর্মচারীদের ন্যূনতম প্রারম্ভিক বেতন-ভাতাদি হবে ২৪ হাজার টাকা। প্রথম দফায় গত মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সার্কুলার জারির পরই তা বাস্তবায়নে সময় বৃদ্ধিসহ অসঙ্গতি দূর করার অনুরোধ জানায় বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সে অনুযায়ী, সার্কুলারের কার্যকরের সময়সীমা ১ মাস পিছিয়ে এপ্রিল করা হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকের জেনারেল সাইডের নির্ধারণ করা বেতন কাঠামো ঠিক রেখে ক্যাশ বিভাগে ২ হাজার টাকা কমানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ওই বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়, যা এপ্রিল মাস থেকে বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে রিট হলেও কোনো স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তী শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও অগ্রগতি জানতে চাইতে পারে আদালত। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ব্যাংকগুলোর কাছে বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীতের ন্যূনতম বেতন-ভাতা এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হয়েছিল। এখন ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি আগামী ১২ এপ্রিলের মধ্যে অবহিতকরণের জন্য আপনাদের অনুরোধ করা হলো।

ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে ইসলামী ধারার প্রায় সব ব্যাংক নতুন কাঠামোয় বেতন কার্যকর করেছে। এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এ ছাড়া প্রচলিত ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কার্যক্ররের বিষয়টি অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের প্রস্তাব আগামী সোমবার তাদের পর্ষদ সভায় উঠবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মো. মেহমুদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এপ্রিল থেকেই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পর্ষদসভায় বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় যেভাবে বলা আছে, ঠিক সেভাবেই কর্মীদের বেতন সমন্বয় করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে দেশে অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ৪৩ ব্যাংক ও বিদেশি খাতের ৯ ব্যাংককে নতুন এ নির্দেশনা কার্যকর করতে হবে। সূত্র বলছে, এ বিষয়ে রিট হওয়ার পরই বেতন কাঠামো কার্যক্ররে অনেক ব্যাংকের আগ্রহে ভাটা তৈরি হয়েছে। রিটের রায়ে কী হয় না হয়, এটা দেখতেই সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে অনেক ব্যাংক। তবে ঈদের আগে ওই রিটের শুনানি নাও হতে পারে। ফলে আগ্রহ না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এপ্রিলের মধ্যেই ব্যাংকগুলোকে নতুন কাঠামোয় বেতন নির্ধারণ করতে হবে।

সার্কুলার অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর এন্ট্রি লেভেলে জেনারেল সাইডে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন-ভাতা হবে ২৮ হাজার টাকা। আর ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন-ভাতাদি হবে ২৬ হাজার টাকা। শিক্ষানবিস শেষে জেনারেল সাইডে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতনসহ ন্যূনতম সর্বমোট বেতনভাতা হবে ৩৯ হাজার টাকা। আর শিক্ষানবিশ শেষে ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তাদের ন্যূনতম বেতন-ভাতাদি হবে ৩৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি ব্যাংকের কর্মচারী বা চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া অফিস সহায়কদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতাও ঠিক করে করে দেওয়া হয়। সার্কুলার অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ সব বিভাগীয় শহরের জন্য বেতন-ভাতা ঠিক করা হয়েছে ২৪ হাজার টাকা, জেলা শহরের জন্য ২১ হাজার টাকা ও উপজেলার জন্য ১৮ হাজার টাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877